এসির বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উপায়
ফ্যানের চেয়ে এসির বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি। তারপরও আজকাল যে গরম, তা থেকে বাঁচতে এসি ছাড়া উপায়ও নেই। তবে কিছু নিয়মকানুন মেনে এসি চালালে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। টিপসগুলো জেনে নিই চলুন:
ফ্যানের চেয়ে এসির বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি। তারপরও আজকাল যে গরম, তা থেকে বাঁচতে এসি ছাড়া উপায়ও নেই। তবে কিছু নিয়মকানুন মেনে এসি চালালে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। টিপসগুলো জেনে নিই চলুন:
১. সঠিক জায়গায় এসি সেট করুন
এসি সেট করার আগে উপযোগী জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। এসি কনডেনসার একটি ছাউনিঘেরা জায়গায় রাখা দরকার, সূর্যের তাপ যেখানে সরাসরি পড়বে না। সরাসরি তাপে কনডেনসারের ভেতরের যন্ত্রাংশ গরম হয়ে যায়। এতে রুম ঠান্ডা করতেও বেশি শক্তি খরচ হয় আর বিল বাড়তে থাকে।
২. নিয়মিত এসির ফিল্টার পরিষ্কার করুন
প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েক মাস পরপর এসির ফিল্টার ও কিছু যন্ত্রাংশ পরিষ্কার বা প্রয়োজনে পরিবর্তন করলে রুম ঠান্ডা করতে এসির কম শক্তি খরচ হয়, বাঁচে বিদ্যুৎ খরচ।
৩. এসির মোড
এখন যেসব এসি তৈরি হচ্ছে, অনেক দিক থেকেই সেগুলো স্মার্ট সিস্টেমে তৈরি। ইনভার্টার, ইকোফ্রেন্ডলি এসিগুলোতে কম বিদ্যুৎ খরচ করে এসি চালানোর মোড থাকে। ফলে এসব এসি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। এসব এসি ম্যানুয়ালি তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণও করে। তাই মোডগুলো বুঝে এসি চালালে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চিন্তা কমে যাবে।
৪. এসি বন্ধ করতে কি ভুলে যান
অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের মতো ব্যবহার শেষে এসিও বন্ধ করে রাখতে হবে। অনেক সময়ই তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হয়ে গেলে এসি বন্ধ করার কথা মনে থাকে না। এ জন্য অধুনা স্মার্ট এসিগুলোতে রয়েছে টাইমিং সিস্টেম। নির্দিষ্ট সময় সেট করে দিলে এসি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকে ঘুমানোর সময় স্লিপ মোড দিয়ে ঘুমান। এটি সত্যিকার অর্থেই বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বুদ্ধি।
৫. ঘন ঘন এসি বন্ধ নয়
অল্প সময়ের জন্য রুম থেকে বের হলে এসি বন্ধ করে যাওয়া উচিত নয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার এসি অন-অফ করলে ঘর গরম হয়ে যায়। ঘরের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে পুনরায় রুম ঠান্ডা করতে এসি বেশি শক্তি খরচ করে। স্বল্প সময়ের জন্য এসি অফ করেও রুম ঠান্ডা রাখতে চাইলে রুমের জানালা বা দরজা খোলা যাবে না। পর্দা টেনে জানালা আর দরজা বন্ধ রাখলে অনেকক্ষণ রুম ঠান্ডা থাকে।
৬. আসবাবের অবস্থান
অনেকেই বিষয়টি অত গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন না, কিন্তু বাতাস সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে—এমন জায়গায় এসি লাগানো ভালো। ঘরের আসবাব এমনভাবে সাজানো উচিত, যাতে এসির বাতাস নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। অনেকের অভিযোগ থাকে, রুমে এসির বাতাস ভালো পান না। এসির বাতাস চলাচলের পথ খোলামেলা রেখে দেখুন, আপনার খরচ ও অভিযোগ—দুই-ই কমবে।
৭. কিছু কাজ সন্ধ্যার পর করুন
সাধারণত দিনের বেলা সূর্যের তাপের কারণে এমনিই গরম থাকে। এর মধ্যে রান্না, ইস্তিরি করার মতো কাজগুলো যদি তখন করা হয়, তাহলে এসির ওপর অনেক চাপ পড়ে। মাস শেষে বিলও তখন বেশি আসে। সন্ধ্যার পর আবহাওয়া কিছু ঠান্ডা থাকে, তখন ওভেন, ইস্তিরি বা চুলা জ্বালিয়ে কাজ করলেও ঘর ঠান্ডা করতে এসির বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতে হয় না।
৮. থাকতে হবে ভেন্টিলেশন
যে ঘরে এসি চলে, তার দরজা, জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে হয়। তাই বলে ঘরের সব ভেন্টিলেটর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এতে বাতাসের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে, গরম বাতাস সহজে বের হতে পারে না। এসির ওপর চাপ পড়ে বেশি। তাই ঘরের ছোট্ট কোনো অংশ দিয়ে বাতাস চলাচলের সুযোগ রাখুন।
৯. বারবার তাপমাত্রা পরিবর্তন
আধুনিক অন্দরসজ্জায় বাসা বা অফিসে থার্মোস্ট্যাট দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু বারবার যদি সেটার তাপমাত্রা পরিবর্তন করা হয়, তাহলে এসির ওপর প্রভাব পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়স্ক মানুষের জন্য বাসার ভেতরে ৬৮ থেকে ৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বেশি উপযোগী।
১০. এসির রুমে বেশি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন টিভি, ল্যাপটপ, ইস্তিরি, হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ডিভাইস থেকে ক্রমাগত তাপ নিঃসরিত হতে থাকে। এসি রুমে এসব ডিভাইস বেশি চালালে রুম ঠান্ডা করতে এসির বেশি শক্তি লাগে। ফলে খরচটাও বাড়ে। তাই বুঝেশুনে এসি ব্যবহার করলে খরচ কিছুটা সাশ্রয় করা যায়।
১১. আর্দ্রতা
আর্দ্রতা কিন্তু ঘরের বাতাস সহজে ঠান্ডা করতে দেয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঘর ঠান্ডা করতে যত সময় লাগে, আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়ায় লাগে তার চেয়ে বেশি। তাই এসির জন্য বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। উন্নত দেশে তো বটেই, আমাদের দেশেও বড় বড় অফিসে সাধারণত ডিহিউমিডিফায়ার নামে একধরনের যন্ত্র লাগানো হয়, যাতে দেয়াল ও বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিক থাকে।
১২. ফ্যানকে ভুলে গেলে চলবে না
ফ্যানের বাতাস সহজে ও কম খরচে ঘর শীতল করে। অনেক সময় হুট করে বাইরে থেকে এসেই এসি ঘরে বসলেও আরাম পাওয়া যায় না। এ সময় এসির তাপমাত্রা পরিবর্তন না করে ফ্যান ছেড়ে দিলে সহজেই স্বস্তি পাওয়া যায়। খরচও বাঁচে।
১৩. লাইটের ব্যবহার
সাধারণ বাল্বের চেয়ে এলইডি লাইট কম তাপ উৎপাদন করে, বিদ্যুৎ খরচও কমে। এই লাইটগুলো বাসাবাড়ির সব জায়গা, বিশেষত এসি রুমের জন্য বেশ উপকারী। অন্দরসজ্জায় অনেকে ফিলামেন্টের লাইট ব্যবহার করলেও সাশ্রয়ের কথা ভাবলে এলইডি লাইটই ভালো। এই আলোয় ঘর কম তাপ উৎপাদন করে আর এসি চালালেও কম খরচ হয়।
১৪. জানালায় পর্দা, ফিল্ম বা স্ক্রিনের ব্যবহার
অত্যধিক গরমের সময় সূর্যের তাপ সরাসরি ঘরে ঢুকে পড়ে, তাই মোটা পর্দা ব্যবহার করা ভালো। অনেকে মোটা পর্দা পছন্দ করেন না, তাঁরা ফিল্ম লাগাতে পারেন। সোলার স্ক্রিন ব্যবহার করেও তাপ কমাতে পারেন। এতে ঘর কম গরম হয়, তাই এসি সহজেই ঘর ঠান্ডা করতে পারে।
১৫. বাড়ির পাশে গাছ লাগান, সময় বুঝে জানালা খুলে দিন
ঘর ঠান্ডা রাখার পুরো দায়িত্ব একা এসিকে দিলে বিল তো বেশি হবেই। তাই পরিকল্পনা করে এসি চালাতে হবে। সাধারণত বাসার পূর্ব বা পশ্চিম দিক থেকে রোদ সরাসরি ঘরে ঢোকে। সেদিকে কিছু গাছ লাগালে সরাসরি তাপ আসবে না। ফলে দিনের বেলা ঘর ঠান্ডা করতে এসির ওপর চাপ কম পড়বে। তা ছাড়া সকাল বা সন্ধ্যায় আবহাওয়া যখন ঠান্ডা থাকে, তখন বন্ধ এসি রুমের দরজা–জানালা খুলে বাতাস চালাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এতে ঘরের গরম বাতাস বের হতে পারবে, পরে সহজেই ঘর ঠান্ডা করতে পারবে এসি।
সুত্র ; প্রথম আলো